”ছাদে কিছুক্ষণ”

Photo: আপনারে আগের পোস্টে ভাল সাড়া দিয়েছেন দেখে আরেকটি গল্প পোস্ট করলাম এখন । নিয়মিত লাইক কমেন্ট করলে বেশি বেশি গল্প পাবেন কথা দিলাম ।

।। একটি অদ্ভুতুড়ে ঘটনা ।।

আমি যেই ঘটনা টার কথা বলতে যাচ্ছি সেটা ঘটেছে প্রায় ৮-৯ মাস আগে। ঘটনাটা যার সাথে ঘটেছে তিনি আমাদের পাড়াতেই থাকেন। আগে তার সম্পর্কে কিছু বলে নেই।

ছেলেটির নাম নজরুল। আমরা তাকে কবি ভাই বলেও ডাকি। খুব হাসি খুশি আর মজার মানুষ নজরুল ভাই। আড্ডা দিতে অনেক পছন্দ করেন। আড্ডা জমলে তাকে ১-২ বেলা খাবার না দিলেও চলবে। নাজ্রুল ভাইয়ের সব চেয়ে প্রিয় বন্ধুর নাম পলাশ। স্কুল লাইফ থেকে উনাদের ফ্রেন্ডশিপ। বলা যায় ১ আত্মা ২ শরীর। পলাশ ভাইও নজরুল ভাইকে ছাড়া কিছু বুঝেন না। মাঝে মাঝে আমাদের বিরক্ত লাগত। সারাদিন সুপার গ্লু এর মত একজন আরেকজনের সাথে লেগে আছে। আমরা মাঝে মাঝে ফাজলামি করে বলতাম, আপনারা মনে হয় জামাই বউ। একজনের জন্ম আরেকজনের জন্য। যাক, এইবার মূল ঘটনায় আসি।

আকবর পলাশ ভাই গিয়েছিলেন ময়মনসিংহে উনার এক আত্মীয়ের বাসায়। বলা বাহুল্য, নাজ্রুল ভাইও গেলেন তার সাথে। অজ পারা গাঁ। খাবার পানির খুবই সমস্যা। বাজারও বাড়ি থেকে প্রায় ৩ কি মি দূরে। যেদিন গেলেন তার দুদিন পর থেকেই পানির কারনে তাদের পেতে সমস্যা দেখা দিল। তখন তারা ঠিক করলেন বাজার থেকে মিনারেল ওয়াটার কিনে আনবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। ২ বন্ধু মিলে রওনা দিলেন বাজারের দিকে। ভাবলেন কথা বলতে বলতে চলে যাবেন। কিন্তু রৌদ্রের মধ্যে ৩ কি মি রাস্তা হেঁটে যাওয়া আসলেই কষ্টের। ২ জনে গরমে ঘেমে অবস্থা করুন। যাক শেষ পর্যন্ত বাজারে পৌঁছলেন। কিন্তু এই এলাকার মানুষ মনে হয় মিনারেল ওয়াটার থেকে পান, বিড়ি, সিগারেট বেশি খায়। যাক অনেক হেঁটে একটা দোকান থেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতল পাওয়া গেলো। ২ লিটারের মাত্র ২ টা বোতল ছিল দোকানির কাছে। যাক একটু বেশি দাম দিয়ে ২ টা বোতলই কিনে ফেললেন পলাশ ভাই। একটা তো সাথে সাথে খুলে খাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। ঠিক তখন এক মহিলা, বয়স আনুমানিক ৭০-৭৫ বছর হবেন, কোথা থেকে এসে যেনও হাজির হলেন। তিনি নজরুল ভাইয়ের কাছে একটু পানি চাইলেন। একে তো ভর দুপুর তার উপর এতো গরম, নজরুল ভাই একটু বিরক্ত হলেন। মনে মনে ভাবলেন, এতো পানির তৃষ্ণায় নিজেদের জান যায় যায় আবার নিজের কেনা পয়সার পানি ফাউ দিবেন নাকি? মাথা খারাপ? পলাশ ভাই তো বলেই ফেললেন যে, খালাম্মা কোত্থেকে উদয় হলেন? এতখন তো দেখছিলাম না। মাটি ফুরে বের হলেন নাকি? টেকা পয়সা চাইলে কিন্তু দিতে পারুম না। মহিলাটা বলল, না না বাবা। একটু পানি দাও। আর কিছু লাগব না। নজরুল ভাই বললেন, আমরা আগে খেয়ে নেই এরপর বোতল সহ দিয়ে দিবো। মহিলাতা দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাদের পানি খাওয়া দেখতে লাগলো। অবশেষে নজরুল ভাই খেয়ে বাকি পানিটা মহিলাকে বাড়িয়ে দিলেন। পানির বোতলটা নিয়ে মহিলাটা কোথায় যেনও চলে গেলেন। এরপর নজরুল ভাই আর পলাশ ভাই একটা রিকশা ঠিক করে বাড়িতে চলে এলেন। সেখান থেকে ফিরে ১ মাসের মাথায় পলাশ ভাই একটি সি এন জি দুর্ঘটনায় মারা যান।

নজরুল ভাইয়ের কান্না সেদিন কেউ থামাতে পারলো না। আমরাও অনেক কষ্ট পেলাম। কয়েকদিন পর আমরা কষ্টটা ভুলে গেলাম। কিন্তু নজরুল ভাই এর পর থেকে প্রায়ই তার কবরের পাশে গিয়ে কাদতেন। ২-৩ সপ্তাহ পর থেকে নজরুল ভাই যেনও কেমন হয়ে গেলেন। তার চোখের নিচে কালি পড়ে গেলো। ঘটনা কি জিজ্ঞেস করলে তিনি এড়িয়ে যেতেন। আগে যেই লোকটা রাত ১০ টার আগে ঘরে ধুঁকতেন না তিনি এখন সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হন না। অনেক চাপাচাপির পর নজরুল ভাইয়ের চাচাতো ভাই এর কাছ থেকে জানতে পারলাম, নজরুল ভাই আজকাল প্রায়ই পলাশ ভাইকে দেখতে পান। পলাশ ভাই তাকে ডাকেন। সন্ধ্যার পর একদিন নাকি তিনি সরাসরি নজরুল ভাইয়ের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর ২-৩ দিন নজরুল ভাইয়ের অনেক জোর ছিল। এই ঘটনা শোনার পর সবাই মিলে পানি পড়া এনে খাওয়ালাম নজরুল ভাইকে। এরপর প্রায় সব ঠিক। মাস দুই পর নজরুল ভাই সুস্থ হতে লাগলেন। কিন্তু পলাশ ভাইকে খুব মিস করতেন। মাস দুয়েক পর তার খালার অসুস্থতার খবর পেয়ে নজরুল ভাইয়ের মা বাবা গেলেন তাকে দেখতে। বাড়ি খালি হয়ে যাবে ভেবে নজরুল ভাই রয়ে গেলেন। রাতে যথারীতি খাওয়া দাওয়ার পর একটু টিভি দেখে নজরুল ভাই শুয়ে পড়লেন। মাঝ রাতে তার ঘুমটা হটাত ভেঙ্গে যায়। উনার নিজের কাছে শরীরটা একটু ভারি ভারি মনে হল। তন্দ্রার ঘোরে তিনি দেখলেন পলাশ ভাই আসছে। পলাশ ভাই তাকে বললেন, চল, তোকে আমি নিতে এসেছি। আমি আর একা থাকতে পারছি না। আমি আগেও চেষ্টা করছিলাম, তুই আসিস নাই। আজকে তোকে নিয়েই যাবো।

নজরুল ভাই বললেন, আমি যাবো না। এরপর অনেক্ষন টানাটানি চলল। প্রথমে পলাশ ভাই তাকে খাট থেকে টেনে নামালেন, এরপর দরজার দিকে টেনে নিয়ে চললেন। নজরুল ভাই শত চেষ্টা করেও আটকাতে পারলেন না। তার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। শেষ মুহূর্তে নজরুল ভাই যখন বাঁচার আশা ছেড়ে দিলেন তখন কোথা থেকে যেনও সেই মহিলা এসে হাজির হল। মহিলাটা পলাশ ভাইয়ের হাত ছাড়িয়ে দিলেন। সাথে সাথে নজরুল ভাইয়ের শরীরটা হাল্কা হয়ে গেলো। নজরুল ভাই তখন মহিলাটাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি যখন আমাকে বাঁচালে তখন আর আগে বাঁচালে না কেন? এতো কষ্ট তো পেতাম না। তখন মহিলাটা বলল, বাবা তুমিও তো আমাকে পানির কষ্ট দিয়েছিলে। তখন আমি তৃষ্ণায় কষ্ট পাচ্ছিলাম। কিন্তু সাথে সাথে তো দাও নি। মহিলাটি এই বলে গায়েব হয়ে গেলো। নজরুল ভাইয়ের সাথে সাথে ঘর কেটে গেলো। তিনি নিজেকে ঘরের সামনে আবিষ্কার করলেন। তখন আজান হচ্ছিল। তিনি দেখলেন, তার সাড়া গায়ে নঝের আঁচড়। এরপর তাবিজ এনে দেয়া হল, এবং সাড়া ঘোরে পানি ছিটিয়ে দেয়া হল। মিলাদ পড়ানো হল। অনেকদিন নানাবিধ অসুখে ভোগার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন।

by: Pinak Dey

ঘটনাটি বেশ কয়েক বছর আগের। এক জ্যোৎস্না রাতে আমি ও আমার দুই বন্ধু বাইরে থেকে খাবার কিনে ছাদে গিয়েছি খাবো একসাথে। আমরা ছাদে উঠার ঠিক কিছু সময় আগেই কারেন্ট চলে যায়। বলে রাখা ভাল আমি স্টাফ কোয়াটার এর বাসিন্দা। কারেন্ট বছরে তখন কয়বার যেত হাতে গুনে বলতে পারব। আমরা কেউই ভিতু প্রকৃতির ছিলাম না। ছাদে উঠেই মনে পড়ল খাবার খাওয়ার জন্য গ্লাস আর প্লেট দরকার। তো আমি নিচে নেমে গেলাম সাজ সর…ঞ্জাম আনার জন্য। ফিরে এসে দেখি আমার দুই বন্ধু ফিসফিস করে কথা বলছে। আমাকে দেখে বলল এত রাতে তোদের ছাদে কারা টাঙ্কি মারে রে! আমি তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই তো। একটি ছেলে আর মেয়ে দাড়িয়ে আছে। মেয়েটার পরনে সালওয়ার কামিজ আর ছেলেটার টি-সার্ট। তিরিশ ফিট দূর থেকে স্পষ্ট চেহারা না দেখা গেলেও এতটুকু বুঝতে কোনই সমস্যা হচ্ছিলনা যে দুজন মানুষ আমাদের দেখে কিছুটা ইতস্তত বোধ করছে; খুবিই স্বাভাবিক ঘটনা দুজন কপোত কপোতী আমাদের দেখলে ওদের বিরক্তি লাগবেই। কিন্তু আমাদের বিল্ডিংএ সেরকম কেউ তখন ছিলনা এত রাতে ছাদে বসে টাঙ্কি মারবে। আমি খুবিই অবাক হলাম। আমার বন্ধুরা বলল ওরা নাকি কয়েকবার ওদের পাশ দিয়ে ঘুরে এসেছে চেনার জন্য কিন্তু আগে কখনও দেখেনি। আমি বললাম ঠিক আছে আমি দেখে আসি। আমি গেলাম ছাদের অপর পারে আর আমার বন্ধুদয় ছাঁদের গেট এর পাশে দাড়িয়ে রইল। আমি গিয়ে মানুষ কেন কোনও কিছুরই অস্তিত্ব পেলামনা। পকেট থেকে মোবাইল বের করে লাইট জ্বালিয়ে খুজে দেখলাম। কোথাও কোনও কিছু নেই; কোনও সাড়াশব্দ নেই। বেশ ঘাবড়ে গেলাম কারণ আমাদের বাসার পিছনে শুধু গাছপালা জঙ্গল ছাড়া আর কিছু ছিলনা। জীনের আবাস সেসব জায়গা আমরা তার আভাস বহুবার পেয়েছি। সেসব গল্প আরেকদিন বলব। মফস্বল শহরে জীনপরী বাস করবে আর সেটা যদি সিলেট হয় খুব একটা অস্বাভাবিক না। পাহাড় পর্বত আর চা বাগান ঘেরা এই শহরে ৩৬০ অলি আউলার আবাস ছিল একদিন। আমরা জীনপরীর গল্প প্রতি রাতে শুনে ঘুমাতে যেতাম সেই ছোটবেলা থেকেই। এখন শহর অনেক বড় হয়েছে কিন্তু তখন সবাই সবাইকে চিনত। মূল ঘটনা থেকে অনেক দূরে সরে পড়েছি; প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আমি বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, শ্বাস বন্ধ করে দৌড়ে গেটের সামনে এসে বন্ধুদের সব কথা খুলে বললাম। তারা প্রথমে আমার কথা বিশ্বাস করলনা, মনে করল মজা করছি। পরে ছাদের দরজা লাগিয়ে পুরো ছাঁদ তন্নতন্ন করে খুজে কাউকেই পেলাম না। পরে সবাই মুখে কলপ এঁটে আমাদের জান হাতে রেখে খাবার আর সব কিছু ছাদেই ফেলে নিচে নেমে এলাম। আমাদের সেকুরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম ছাদে কেউ উঠেছিলো কিনা। উনি না বললেন। সব কিছু শুনার পর আমাদের কে যা শুনালেন তা এখনও আমার চিন্তা করলে রাতে ঘুমাতে ভয় লাগে। আমাদের বাসার ঠিক পিছনেই সারি সারি পাহাড়। আমরা পাহাড়কে সিলেটে টিলা বলি। সেই টিলার একটি আমাদের বাসা থেকে পায়ে হেঁটে যেঁতে ৩-৪ মিনিট লাগে। সেখানে একটি মাজার আছে। লোকে বলে পীরের মাজার। আর মাজারের পাশে অনেকগুলো কবর, তাদের অনেকেই নাকি পক্ষাঘাতে মৃত্যুবরণ করেছেন (বলে রাখা ভাল সিলেটে অনেক আগে থেকেই পাহাড়ে মানুষের কবর দেয়া হয়, আগে এই গোরস্থানগুলোর সঠিক কোন হিসাব ছিলনা)। সেসব ঘটনা কয়েক শতবছর আগের। তাদের অনেকের আত্মা নাকি এখনও এলাকাতে রাতের বেলা দেখা যায়। রাতের বেলা আমাদের এলাকতে জীন দেখা যেন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। আমি এতদিন শুধু লোকমুখেই শুনতাম এইবার নিজেও দেখলাম। ঘটনার পরে আমি খারাপ স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। স্বপ্নগুলোর একটা ছিল এরকম; আমাদের বাসার পিছনের পাহাড়ের মাথা খুলে যাচ্ছে আর তার ভিতর অনেকে প্রবেশ করছে আর বের হচ্ছে; মানুষরূপী কিন্তু ভাব্লেশহীন তাদের চেহারা আর আকার অনেক বড়। আমিও তাদের সাথে ভিতরে যাচ্ছি; গিয়ে দেখি ভিতরে অনেক বড় শহর; সেইখানে সবাই কোন না কোন কাজ করছে। সূর্যের আলোর বদলে চারিদিকে আগুনের আলো জ্বলছে, এত বাস্তব সব কিছু আমার চোখের সামনে এখনও ভাসে। স্বপ্ন স্বপ্নই; তবুও এর অর্থ আমি বহুবার খোঁজার চেষ্টা করেছি কোনও উত্তর দাড় করাতে পারিনি। আমি আমার সেই বন্ধুদের সাথে এইসব ব্যাপারে কথা বলতাম না; তারাও ঘটনাটি এড়িয়ে চলতো আমি বুঝতে পারতাম। যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু আমার জীবন অনেকটাই পাল্টে যায় এরপর থেকে। এই ঘটনার পর আমি বহুদিন ছাদে উঠিনি। এখনও চিন্তা করলে আমার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আগে আমি বাসায় একা থাকতাম মাঝেমধ্যে আর আমার পরিবার ঢাকাতে যেত। তখন আমার বয়স ১৩-১৪ হবে। তখনও অনেক আজব ঘটনা ঘটতো। আজব শব্দ পেতাম, দরজা ভিড়ানোর আওয়াজ পেতাম যদিও আমি তখনও কিছু দেখিনি তাই ভয় পেতাম না। কিন্তু ছাদের সেই অশরীরী ঘটনার পর একা বাসায় থাকার কথা আর কল্পনাও করতে পারিনা।

Related posts